Search Whatever You Want

বাবা_হবার_গল্প



       বাবা_হবার_গল্প

আজ অনেক কষ্টেসৃষ্টে শশুড় মশাইকে ফোন দিয়ে বলেই ফেললাম -আব্বা, নিশি কে আর পড়াতে পারবো না। বাসায় ঝামেলা হচ্ছে, সংসারটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।শশুড় মশাই জ্ঞানী মানুষ, তেমন কিছু বললেন না, আস্তেকরে বললেন -বাবা, মেয়েকে যেদিন তোমার ঘরে পাঠিয়েছি সেইদিন থেকে মেয়ের সব ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব তোমার। তুমি যেইটা ভালো মনে করো সেটাই করো। ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছি, একি করলাম! বিয়েরদিন শশুড় নিশিকে আমার হাতে দিয়ে বলেছিলেন, বাবা'রে- আজ থেকে নিশির সব দ্বায়িত্ব তোমার। ওর লেখাপড়ার খুব শখ, পারলে একটু ব্যবস্থা করো। সেদিন কথা দিয়ে হ্যাঁ বলে ছিলাম। খুশিতে নিশির বাবার চোখের কোনে জল চিকচিক করছিলো। আর আজ সেই আমিই কিনা আজ বললাম, নিশিকে আর পড়াতে চাচ্ছিনা। আজও হয়ত উনার চোখের পানি টলমল করছে, সেটা আনন্দের নয় কষ্টের। শিক্ষিত প্রফেসর জামাইর কাছে এমন কথাটা শুনতে হবে হয়ত কল্পনাও করেন নি। সরি ভুল হয়ে গেছে, এইযে কানে ধরেছি, আর কক্ষনো এমন করবো না। প্লিজ, মাফ করে দাও। পিছনদিক থেকে জড়িয়ে ধরে নিশি এক সুরে বলে ফেললো কথা গুলো। নিশির ভয়েস টা অনেক মিষ্টি। ওর এমন আকুতি শুনে নিজেকে সামলে রাখা কঠিন। -এতোক্ষন ঝগড়া করে, এখন আর কোন সরি টরি শুনতে পারবো না। -সরি বললাম তো, কেন এমন করছো? বলতে বলতে কেঁদে ফেললো। বিয়ের পরে এই প্রথম নিশির কান্নাভেজা কন্ঠ শুনলাম। পিছনদিক থেকে আমাকে চেপে রাখায় ওর মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম না। জোর করে ওর হাত ছাড়িয়ে নিলাম মুখ দেখবার জন্য। মেয়েরা কাঁদলে মায়াবিনী রুপ ফুটে উঠে। -ইশশসসস রে!!! আমার লক্ষ্মী বউ টা কেঁদে দু'গাল ভিজিয়ে ফেলছে। নিশির থুতনিটা ধরে মুখটা উপরে তুললাম। মেয়েটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আজ হয়ত একটু বেশি বাড়াবাড়িই করে ফেলেছি। ঝগড়া করে রাগের মাথায় শশুরমশায় কে ফোন দেয়া উচিৎ হয় নি। শশুর-শাশুড়ি নিশিকে শুধু গায়েগতরেই বড় করেছেন। মনটা এখনো শিশুদের মতই, সারাদিন দুষ্টামি করে বাচ্চা মেয়ের মত। আর কিছু বলতে গেলেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দেবে। এইতো সেইদিন কলেজ যাবো, চশমাটা খুঁজেই পাচ্ছি না। তাড়াতাড়ি যেতে হবে ক্লাস আছে। চশমা ছাড়া ক্লাসে পড়াতে অসুবিধা হয়।


 এদিকে চশমা খুঁজে ক্লান্ত আর নিশি মিটিমিটি হাসছে। বুঝেছি নিশিই চশমা লুকিয়েছে। -নিশি চশমাটা কই? খুঁজে পাচ্ছিনা। -এখন থেকে তোমাকে চশমা ছাড়াই কলেজ যেতে হবে। একেবারে স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড বলে দিলো। -বলো কি? চশমা ছাড়া ক্লাস নিবো কিভাবে? -এতো বুঝিনা আমি। চশমা পড়লে তোমাকে স্মার্ট লাগে, কলেজের মেয়েরা তোমার প্রেমে পড়ে যাবে। সো নো চশমা। ব্যস...। ওর এমন সব ব্যবহারে যতটা না রাগ লাগে তার চেয়েও বেশি অবাক হই ওর ছেলেমানুষি দেখে। মাঝেমধ্যে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই না জানি কোন ভুলের কারনে জিদ করে ও বাপের বাড়ি চলে যায়। আর নিশি ভাবে আমার প্রতি আবার কোন মেয়ে ফিদা হয়। ভালবাসায় দুজনার কোন বৈরিতা নেই। ভালবাসেই খুব যত্ন করে নিশি লবন বেশি দিয়ে তেতো করে রান্না করে, আবার কখনো ভাত পুড়িয়ে রান্না করে। পেয়াজ কাটতে গিয়ে যখন দেখি নিশির চোখেরজল পড়ছে। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে বলি কি হয়েছে কাদছো কেন? রান্নাকরা কষ্ট লাগে? কাজের বুয়া এনে দেই? নিশি চোখেরজল আঁচলে মুছে নিয়ে রাগ ভাব নিয়ে বলে -কেন? আমার রান্না বুঝি খাওয়া যায় না? -নাহহ, তুমি কাঁদছ যে, তাই বললাম! -হুহহহ, এতো দরদ দেখাতে হবে না। -আমার বউ কে আমি দরদ দেখাবো না! কে দেখাবে? হয়ত নিশি সব কষ্ট মেনে নিয়ে চায়, আমি যেন ওর রান্নাকরা খাবার খেয়েই একটু বেশিই ভালবাসি। আর নিশিও জানে ওর আনাড়ি হাতের রান্নাই সবচেয়ে সুস্বাদু লাগে। নিশি লেখাপড়ায় খুব ভালো, ওর রেজাল্ট দেখে বিয়েরপর লেখাপড়াতে মানা করি নি। আমি বাড়ির কাছেই একটা কলেজের বাংলা প্রভাষক। নিশির অন্যান্য সাবজেক্টে বুঝতে সমস্যা হলে পারি বা না পারি সেগুলো সলভ করার চেষ্টা করি। আর বাংলা বা ইতিহাস গুলো হোম টিউটরের মত পড়াতে হয়। ও বাংলা বা ইতিহাস বুঝেনা তা নয়, ইচ্ছাটা কলেজ মাষ্টার স্বামীর কাছে পড়বে প্রতি লাইন ধরেধরে...! -ঢাকাশহর জ্যামের শহর.../ --ঢাকাশহর জ্যামের শহর.../ -অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা আর রিক্সা-ই জ্যামের মুল কারন.../ -অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা আর রিস্কা-ই জ্যামের মুল কারন.../ -নিশি...উচ্চারণ রিস্কা নয়...রিক্সা হবে। -হুমম... রি-স-কা.../ -নাহহ... রি-ক-সা.../ -রিস্কা.../ -রিক্সা.../ -ফাজিল মাষ্টার! যাহহ পড়বোই না আর। শুরু হল দ্বন্ধ, ঝগড়া, খুনসুটি! প্রতিদিন-ই সোহরাব-সোরহাব, কামলা-কালমা এইসব উচ্চারণ নিয়ে ঝগরা লাগাবে। ঝগড়ার উচ্চারণটাও ঝরগা বলবে। ইংরেজি তো এমনিতেই কম বুঝি তারপরও পেঁচিয়ে কুচিয়ে Good Better Best কে Good Gooder Goodest বলবে। মাঝেমধ্যে মনেহয় আমি বাংলার প্রভাষক তাই হয়ত আমাকে ক্ষেপিয়ে দিতেই ইচ্ছা করে এভাবে বলে। বউকে কি আর এভাবে পড়ানো যায়। মেজাজ ঠিকরাখা কঠিন হয়ে যায় এরকম পিচ্চিপনা দেখলে। একাদশ শ্রেনীর বাংলা ক্লাসে নোট ছাত্রছাত্রীদের নোট দিচ্ছিলাম, আর নিশি একটু পরপর ফোন দিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। একবার বাজারের কথা বলছে তো আরেকবার বাংলা ব্যকরণের সমাস জিজ্ঞেস করছে। আর আমিও ক্লাসের নোট বুঝিয়ে দেয়ার ফাকে ফাকে ওর প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছিলাম। ক্লাস শেষে অফিস রুমে ঢুকতে যাবো

 

এমন সময় মনে হলো অন্য টিচাররা আমাকে নিয়ে গুনজন করছে। রুমে না ঢুকে দরজার সামনে বাইরেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। সিনিয়র শিক্ষক বুড়ো-হাকিম বলছেন- -আমাদের বাংলা ক্লাসের টিচার রিয়াদ সাহেব বিয়ে করার পরে একেবারে বউ ন্যাওটা হয়ে গেছেন। -আর বলবেন না স্যার! ক্লাসে বসেও ছাত্রছাত্রীদের সামনেই মোবাইলে গুটুরশুটুর কিসব আলাপ যে করেন উনি, মনে হচ্ছে নতুন প্রেমে পড়েছেন। পাশ থেকে ফোড়ন কাটলেন জর্দা-রইস স্যার। উনাদের সমালোচনা মনে হয় পছন্দ হচ্ছিলো না এফএমরেডিও-রোকেয়া ম্যাডামের। উনি বললেন-বিয়েরপর যা ন্যাকামো করছেন, ইচ্ছে করছে আবারো বিয়ে করি। -হো হো হা হা ... সবাই একযোগে হেসে উঠলেন...। কি ব্যাপার! দরজায় দাঁড়িয়ে কি করছেন? কঞ্জুস-সাইফুল স্যার একটু ধাক্কা দিয়ে আমাকে প্রায় টেনে নিয়ে অফিস রুমে প্রবেশ করলেন। আমাকে দেখেই হাসির শব্দ কুক... কুক... করে বন্ধ হয়ে এলো। চেয়ারে গিয়ে বসতে না বসতেই আবারো ফোন এলো নিশির। -হ্যালো! -এতো হ্যালো হ্যালো কইরো না তো। বলো মুরগীর ডিম কয়দিনে ফুটে বাচ্চা হয়? -পরে বলছি এখন অফিসে। প্রায় ফিসফিসিয়েই বলতে হলো। -না, পরে হবে না এক্ষুনি বলতে হবে। -পরে বলছি.../ আরেহ ভাই একটু লাউডে দেন, আমরাও একটু শুনি ভাবী-জ্বী কি বলেন...চশমিশ-ময়না ম্যাডাম বললেন। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই মোবাইলটা লাউড দিয়ে টেবিলের মাঝে রেখে দিলেন উনি। -এইই...কি হলো বলছো না কেন? -.../ -সমস্যাটা কি?ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় কতদিনে এটাই জানো না। সবাই অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর লজ্জ্বায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। মাথা নিচু করে ফেললাম। পারলে টেবিলের নিচে ঢুকে যাই। আল্লাহ এ কেমন বউ দিলো আমাকে যে, আজ অফিসের সব টিচারদের সামনে অপমানবোধ করছি। মনে হচ্ছিলো একবার জোরে চিতকার দিয়ে বলে ফেলি - লাগবেনা আমার সুন্দরী বউ ফেরত চাই আমার ব্যাচেলর জীবন। -... কার ডিম...? ফুটে নাই কেন এখনো...? বলে একসাথে হাসতে লাগলো সব টিচার। নিশি হয়ত কিছুটা বুঝতে পেরেছে। লাইন কেটে গেলো... টুট টুট টুট... মোবাইলটা নিয়ে এক দৌড়ে বের হয়ে এলাম অফিস থেকে, এরপরে সোজা বাসায়। আজ যেই করে হোক একটা বিহিত করতেই হবে। নিশির ছেলে মানুষিপনা আর মেনে নেয়া যায় না। আজ ওর একদিন আর আমার যে কয়েকদিন লাগে। প্রয়োজনে শশুরের কাছে পাঠিয়ে দেবো। -নিশি...নিশি ...অইইইই বান্দরনী দরজা খোল... যাকে কখনো জান্টুস ছেড়ে তুমি ধরেই ডাকা হয় না এখন রাগের মাথায় তুই তোকারিও আমার মুখে বাধছে না। -কি ব্যাপার? আজ এত্তো তাড়াতাড়ি ? তা আবার না জানিয়েই? -রাখ তোর ঢংগের কথা...। সময়ে অসময়ে এত্তো ফোন করিস কেন? খেয়েদেয়ে আর কাজ নেই? আমার আচরনে নিশি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে কখনো এমন বিমুর্ত দেখেনি। আর কি! এরপরে তো শশুরকে ফোন-ই করে বললাম, ওকে আর পড়াতে পারছিনা। -মাফ করবে না আমাকে?



 নিশি ধরা গলায় বললো। -কিসের মাফ? কোন মাফ নেই, চেপে মেরে ফেলবো আজ। নিশিকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলাম। নিশির আমার বুকের উপর ইচ্ছেমত কিলঘুষি চালাতে লাগলো। -মাফ করবা না যখন আবার বুকে টেনে নিছো কেন? তোমার এই পাষান বুকে আমার জায়গা নেই। বলে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। তবুও জোর করেই ওকে চেপে ধরে আছি। এখন কান্নার শব্দটা আর হচ্ছে না। দুটি মন হয়ত বুঝে গেছে কাকে কি বলত চাচ্ছি। ওর চাহনিতে চেয়ে আছি অনেকক্ষন। খটখট দরজায় আওয়াজ হচ্ছে। হয়ত কেউ এসেছেন। নিশি দরজা খুলে দিলো। একি শুশুরমশায় এসে পড়েছেন যে, একমাত্র মেয়ে কে বাড়ির কাছে বিয়ে দেয়ার এই একটাই সুবিধা , যখন তখন মেয়ের বাড়ি আসা যায়। -আব্বা! আমি নিশিকে পড়াবো। তখন ভুল করে আপনাকে রাগের মাথায় বলেছিলাম। সরি...। -বাবা বুঝে গেছি আমি। তোমাদের দেখতে এলাম, অনেকদিন আসাই হয় না। -নিশি যাও তোমার মুরগীর ডিমগুলো নিয়ে এসো। শশুর জামাই একসাথে খাবো, ভীষন ক্ষুধা পেয়েছে। তোমাকে ২৮ দিনে বাচ্চার ফোটার আশায় থেকে ক্যালেন্ডারের পাতা দাগাতে হবে না। নিশি একবার কটমট করে তাকালো আমার দিকে। তারপরেই কিচেনে চলে গেলো। লবন কম ঝালবেশি দিয়ে রান্না যাই করুক, ওর আনাড়ি হাতের ডিম ভাজি খেতে বেশ ভালই লাগে। খেয়েদেয়ে শশুর চলে গেছেন, যাবার সময় একটা কথা বলে গেছেন আমার কানে কানে। নিশি এখন আবার বাচ্চাদের মত ঝগড়া বাধিয়েছে আমার সাথে, সেই কথাটা শোনার জন্য । নাহহহ সেই কথাটা ওকে কিছুতেই বলা যাবে না। বললে আবারো ক্লাসে অপমান হতে হবে। গল্পটি এতো সময় নষ্ট করে যারা পড়েছেন, শশুরমশায় যে কথাটা আমাকে বলে গেছেন সেটা বলে দিচ্ছি। তার আগে আপনারা প্রমিজ করেন নিশিকে ভুলেও বলবেন না। জানলে আবারো নতুন ঝগড়া বাধাবে আমার সাথে। ওকে.../ -বাবা- তোমাকে প্রথম দিন বলেছিলাম নিশির পড়াশোনার করার খুব শখ। আরো একটা কথা বলাই হয় নি। ওর বাচ্চাকাচ্চাদের প্রতিও দুর্বলতা আছে। তাছাড়া তোমার বাড়িতে এলে গল্প করার মানুষ পাই না । নাতিভাই/নাতনী যেই হোক তো একটা নিয়ে এসো। এবারই বুঝতে পারলাম নিশি কেন মুরগীর ডিম তা’ইয়ে বসিয়ে দিন গুনে। মুহাহাহাহাহাহাহা... নিশি... এবার থেকে তুমি তোমার নিজের দিন গুনতে থাকবা। অফিসে স্যারেরা আমাকে অপমান করুক আর মুরগী গোল্লায় যাক, ডিম গুলো শশুর আর আমি পোচ করে খেয়ে ফেলবো। ২মাস পর থেকে- উফফফফ...দিন যেন আর ফুরায় না। মুরগীর মাত্র ২৮দিন হলে মানুষের ২৮০ দিন লাগে কেন? শুন্যটা পিছনে না বসলে কি হত? এই শুন্যটাই নিশির প্রতি ভালবাসা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন আর নিশি দিন গুনে না আমি-ই হাতের কড়া গুনে দিন হিসাব করি আর ক্যালেন্ডারের পাতা দাগাই। কবে যে বাবা হবো! একটা বাচ্চা বউর কোলে আরেকটা বাচ্চা মেয়ে । এখন নিশির চেয়ে আমিই বেশি বাচ্চাদের মত পাগলামি করি। ***গল্পটি যদি আপনি সম্পুর্ন পড়ে থাকেন তবে বলুন তো- -বলুনতো গল্পের নায়কের নাম কি?






No comments: